বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দিনদিন বেড়েই চলেছে। লবণাক্ততা, ঘূর্ণিঝড়, এবং মাছের সম্পদের হ্রাসের কারণে স্থানীয় মানুষজনের জীবিকা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তবে এই সংকটের মধ্যেই জেগে উঠেছে এক সম্ভাবনাময় নতুন পথ—সামুদ্রিক শৈবাল চাষ। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ, ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স ডিপার্টমেন্ট এবং AIRD সংস্থা যৌথভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ‘পাইলটিং স্মল স্কেল ম্যাক্রোঅ্যালগি কালচার ফর আমেলিওরেটিং লিভলিহুড অফ কোস্টাল কমিউনিটিস অ্যান্ড এড্রেসিং কার্বন ডাই অক্সাইড রেমিডেশন’ নামে এক প্রকল্পের মাধ্যমে। এই উদ্যোগ অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
বাংলাদেশের দীর্ঘ ৭১০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকা এবং ২৫,০০০ বর্গকিলোমিটার জলরাশি এই শৈবাল চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। বর্তমানে দেশে প্রায় ২০০ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল পাওয়া যায়, যার মধ্যে ১৯টি প্রজাতি বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে উলভা ইনটেসটিনালিস বা ‘ডেললা’ নামের শৈবালটি অন্যতম, যা সহজে চাষযোগ্য, পুষ্টিগুণে ভরপুর, দ্রুত বৃদ্ধি পায়, লবণের জলেও টিকে থাকে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাথমিক গবেষণায় ড. মো. রাজীব সরকার বলেছেন, ‘সামুদ্রিক শৈবাল আমি সামুদ্রিক সবজি বলি কারণ এতে উচ্চ মানের প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। এর অ্যান্টি অক্সিডেন্টের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শৈবাল থেকে বায়োপ্লাস্টিক, বায়োডিসেল তৈরি সম্ভব, যা মূল্য সংযোজনের জন্য কাজে লাগে। নারীদের জন্য এই শৈবাল আয়ের পথ খুলে দেয়, পাশাপাশি এর পুষ্টিগুণ যেমন আয়রন, হোমোন ব্যালেন্স করে এবং মনোযোগ ও মানসিক সুস্থতাও উন্নত করে। প্রতি কেজি শুকনের শৈবাল ০.৫ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণে সক্ষম।’
প্রকল্পের চাষের জন্য বরগুনার কুয়াকাটা, লেবুরচর, গঙ্গামতি এবং চোরপাড়া অঞ্চলে প্রাথমিকভাবে রশি ও জালের মাধ্যমে শৈবাল চাষ চালানো হয়, যেখানে স্থানীয় জেলেরা সরাসরি অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে গঙ্গামতি ও লেবুরচরে চাষের ফলন সবচেয়ে বেশি। এই পদ্ধতি বেশ সহজ কারণ এতে জমি বা রাসায়নিক সার প্রয়োজন হয় না।
উলভা শৈবালের গুঁড়ো থেকে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের মূল্য সংযোজিত পণ্য, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে পুষ্টিকর খাবার যেমন নারকেল শিট, যা জাপানে সুশিতে ব্যবহৃত হয় এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ। এছাড়া রপ্তানির জন্য তৈরি হয়েছে সীউইড ট্যাবলেট, যা আয়োডিন, আয়রণ, ভিটামিন ১২ ও খনিজে সমৃদ্ধ, হজমে সহায়তা করে এবং থাইরয়েডের ভারসাম্য বজায় রাখে।
বিশেষভাবে জনপ্রিয় হচ্ছে সীউইডের আইসক্রিম, যেখানে দুধের ২৫% থেকে উলভা ব্যবহার করা হয়, যা খনিজে সমৃদ্ধ, ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অন্যান্য পণ্য হিসেবে তৈরি হচ্ছে বিস্কুট, জিলাপি, মিষ্টি, রোল, পাশাপাশি সাবান ও ফেসপ্যাক। এইসব পণ্য স্থানীয় বাজার ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যাপক চাহিদা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারে ভাল ফলাফল পাওয়া গেছে। এক শিক্ষার্থী মাহজাবিন বলেন,