নওগাঁর মান্দা উপজেলার একটি হাসপাতালে জন্মের মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই নিজের মায়ের অবহেলায় অসহায় হয়ে পড়ে থাকে এক নবজাতক কন্যা। বাচ্চাটিকে নিজের বুকের আবরে নেওয়ার মা ও শাশুড়ির আচরণে হতবাক হয়ে পড়েন তার বাবা। শনিবার বিকেলে এই ঘটনা জানাজানি হলে পুরো এলাকায় ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। ভুক্তভোগী বাবা তৌহিদ ইসলাম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ঘটনাটির সুরাহা চেয়ে।
তৌহিদ ইসলাম (২৫) নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চকহরি বল্লভ গ্রামের বাসিন্দা। দুই বছর আগে প্রেমের সম্পর্কের সূত্রে তিনি মান্দার সাহাপুর (ফজিদারপাড়া) গ্রামের লছের আলী মণ্ডলের মেয়ে সাথী আক্তারকে বিয়ে করেন।
তৌহিদের ভাষ্য অনুযায়ী, স্ত্রীর সঙ্গে তিন মাস ধরে তার শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন। ২৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার প্রসব বেদনা শুরু হলে মা ও বাবার খবর পেয়ে তিনি শ্বশুরবাড়ি যান। সেখান থেকে স্ত্রী ও শাশুড়িকে নিয়ে তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ভর্তি হন। ওই দিন সন্ধ্যার দিকে স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে তাদের কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।
কিন্তু সেই আনন্দের মুহূর্তটা বেশিদিন থাকেনি। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ আনতে বাজারে গেলে, ফিরে এসে লক্ষ্য করেন- নবজাতকটি স্ত্রীর কোলে নয়, হাসপাতালের বেডের ওপর পড়ে আছে। মা সাথী আক্তার ও শাশুড়ি শিশুটিকে ফেলে পালিয়ে গেছেন।
আবেগপ্রবণ তৌহিদ ইসলাম বলেন, “সন্তান জন্মের আনন্দে ভেসে যাচ্ছিলাম। কিন্তু ফিরে এসে দেখলাম, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় খুশি এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। স্ত্রীর ও শাশুড়ির আচরণে আমি হতবাক। এখন আমি নিরূপায় হয়ে শিশুটাকে কোলে নিয়েছি।”
অভিযোগের বিষয়ে সাথী আক্তার বলেন, “বিয়ের পরে থেকে স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য চলছিল। আমি সন্তান চাইনি, কিন্তু সন্তান হবে। আমি আর সংসার করবো না, তাই সন্তানও পালন করব না।”
মান্দা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সামছুর রহমান বলেন, “তৌহিদ ইসলাম আমাদের লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। স্ত্রী সাথী আক্তার জানিয়েছেন, তিনি স্বামীর সঙ্গে সংসার করবেন না এবং সন্তানের দায়িত্ব নেবেন না। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এখনো এলাকায় একটি প্রশ্ন করুণভাবেই থাকছে— এই শিশুটি, যে মা আঁচলের চেয়েও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, ভবিষ্যতে কেমন জীবন কাটাবে?”