০৭:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
দুর্গাপূজায় ভারতে রপ্তানি হবে ১২০০ টন ইলিশ দুদকের হাসপাতালের বিল গ্রহণে আসামি, বরখাস্থ হয়েছেন পরিচালক খান মো. মীজানুল ইসলাম পুরানো দিনের বাইস্কোপ এখন শুধুই স্মৃতি যুক্তরাষ্ট্রের আয়রন ডোম প্রকল্পের নেতৃত্বে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শরিফুল খান ডাকসু নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাতীয় স্বার্থে বস্তুনিষ্ঠ ও জবাবদিহীমূলক গণমাধ্যম অপরিহার্য: পরিবেশ উপদেষ্টা পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাজে ফিরতে নির্দেশ নারী ও শিশুদের জন্য সাইবার স্পেস নিরাপদ করতে উদ্যোগ জরুরি: উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশীদ নির্বাচনের সময় গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ নিশ্চিতের আহ্বান আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস আজ

নরসিংদীতে ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শিল্প ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে

একসময় নরসিংদী জেলায় পাড়াগাঁও এলাকাগুলোতে সরব ছিল তাঁতশিল্পের চর্চা। সেখানে ছিল বরং এক ধরনের গর্বের বিষয়, হাতের টানা তাঁত থেকে তৈরি শাড়ি, লুঙ্গী, বিছানার চাদর, দরজার পর্দা ও গামছা। এসব কাপড় তৈরিতে ব্যবহার হত বাংলার বিখ্যাত সূতি কাপড়, যা পরে ছিল দেশের বিভিন্ন অংশে জনপ্রিয়। কিন্তু আধুনিকতার ছোয়া এসে এখন সেই ঐতিহ্যবাহী শিল্প ধীরে ধীরে ক্ষীয়মাণ হয়ে পড়েছে। এখন আর সেই ঠকঠক শব্দ আর ভাঙা গুঁড়ি গুঁড়ি কাজের আওয়াজ শোনা যায় না। পেছন ফিরে দেখা যায়, যেখানে হাতের তাঁতের জায়গা দখলে রেখেছিল পাওয়ার লুমগুলো। বিদ্যুৎ-চালিত তাঁত ও পাওয়ারলুমের প্রতিযোগিতায় হার মানতে মানতে গড়ে উঠেছে আধুনিক ইন্ডাস্ট্রি। ফলে, গ্রামীণ জনপদে এখন বুননের সেই সহজ সরলতা এবং ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে।এখন গ্রামাঞ্চলের তাঁতগুলো প্রায় একেবারেই বন্ধ। মাকুরের আওয়াজ আর আর দেখা যায় না। তাঁত শ্রমিকরা অনেকেই এখন শুধু গামছা তৈরি করে প্রতিবেশীদের জন্য বা অবসরের সময়ে। অনেকেরই তীব্র প্রতিযোগিতা আর অর্থের অভাবে নতুন সূতা পেতে কষ্ট হয়। এ গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, এক সময় তাঁদের ঘরে ঘরে তাঁত ছিল, আর তাঁতের কাপড়ের চাহিদা ছিল আকাশUAGE। তবে এখন এই শিল্পের অবস্থা খুবই উদ্বেগজনক। ইউরোপ আমেরিকা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুরনো তাঁত শিল্পের সূতী কাপড়ের ঐতিহ্য এখনও কিছুটা জীবিত থাকলেও, নরসিংদীতে তা ধীরে ধীরে অস্তিত্ব হারাচ্ছে। নানা সমস্যার জন্য বিকাশ অব্যাহত রাখতে পারছে না এই শিল্প, যেমন প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাব, সরকারি ঋণ দুর্বলতা, রং-সুতা, উপকরণের দাম ও বাজারজাতকরণে অপ্রতুলতা। আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারার কারণে, দেশের অধিকাংশ তাঁতশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।প্রাচীন সময়ে এই তাঁতশিল্পের মাধ্যমে বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাপড় মসলিন তৈরি হত। পরে ধীরে ধীরে মোটা শাড়ী, লুঙ্গী, বিছানার চাদর ও সূতী কাপড় তৈরিতে এই কারিগররা মনোযোগী হন। এই শিল্পের গৌরবময় ইতিহাসের অন্যতম কেন্দ্র ছিল শেখেরচর বাবুরহাট, যেখানে হাজার হাজার তাঁতী তাদের তৈরী সূতী কাপড় বিক্রি করতেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারী ক্রেতারা এখানে এসে নরসিংদীর সূতী তাঁত কাপড় কিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করতেন। তবে এখন বৈচিত্র্য ও চাহিদার অভাবে এই রেওয়াজ নেই। একসময়, মেয়েদের বিয়ের জন্য তাঁত কাপড়ের গুরুত্ব ছিল অকল্পনীয়। কিন্তু বর্তমানে সেই ধারা বলয়ে পড়েছে। নব্বইয়ের দশকে লক্ষাধিক তাঁত শ্রমিক থাকলেও, আজ হিসেব মতে শতাধিকেরও কম হস্তচালিত তাঁতশিল্প টিকে আছে। করিমপুরের রূপ মিয়া জানিয়েছেন, এক সময় তাঁদের গ্রামে প্রতিটি পরিবারে তাঁত ছিল। এখন শুধু কিছু পরিবারের মধ্যে গামছা তৈরির কাজ চালানো হয়। এই ব্যবসাও ঝুঁকির মধ্যে চলে এসেছে। তিনি বলছেন, এখনকার বাজারে এই গামছার চাহিদা কম। অপ্রচলিত হয়ে পড়েছে। এখন এই শিল্প ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে।বিসিকের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, তাঁতশিল্পের সেই প্রাচীন ধারা আধুনিকার সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে পারলে এর পুনরুদ্ধার সম্ভব। তাঁতীদের জন্য তারা বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে এবং শেহেরচর বাবুরহাটের মতো বাজারে তাদের পণ্য প্রচারের পরিকল্পনা নিয়েছেন। স্বল্প সুদে ঋণের সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে, যাতে তাঁত শিল্প আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে। তবে, বেশিরভাগ উদ্যোক্তা ও কারিগর এখনই এই শিল্পের ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদী নয়। পুরো জেলাতে এখন এই ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প সংকটে পড়ে গেছে, আর এর রক্ষাকবচ হিসেবে এখনো কেউ এগিয়ে আসেনি।

ট্যাগ :

তোশিমিৎসু মোতেগি জাপানের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে দৌড়ে ঘোষে উঠলেন

নরসিংদীতে ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শিল্প ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে

প্রকাশিতঃ ১০:৫০:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

একসময় নরসিংদী জেলায় পাড়াগাঁও এলাকাগুলোতে সরব ছিল তাঁতশিল্পের চর্চা। সেখানে ছিল বরং এক ধরনের গর্বের বিষয়, হাতের টানা তাঁত থেকে তৈরি শাড়ি, লুঙ্গী, বিছানার চাদর, দরজার পর্দা ও গামছা। এসব কাপড় তৈরিতে ব্যবহার হত বাংলার বিখ্যাত সূতি কাপড়, যা পরে ছিল দেশের বিভিন্ন অংশে জনপ্রিয়। কিন্তু আধুনিকতার ছোয়া এসে এখন সেই ঐতিহ্যবাহী শিল্প ধীরে ধীরে ক্ষীয়মাণ হয়ে পড়েছে। এখন আর সেই ঠকঠক শব্দ আর ভাঙা গুঁড়ি গুঁড়ি কাজের আওয়াজ শোনা যায় না। পেছন ফিরে দেখা যায়, যেখানে হাতের তাঁতের জায়গা দখলে রেখেছিল পাওয়ার লুমগুলো। বিদ্যুৎ-চালিত তাঁত ও পাওয়ারলুমের প্রতিযোগিতায় হার মানতে মানতে গড়ে উঠেছে আধুনিক ইন্ডাস্ট্রি। ফলে, গ্রামীণ জনপদে এখন বুননের সেই সহজ সরলতা এবং ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে।এখন গ্রামাঞ্চলের তাঁতগুলো প্রায় একেবারেই বন্ধ। মাকুরের আওয়াজ আর আর দেখা যায় না। তাঁত শ্রমিকরা অনেকেই এখন শুধু গামছা তৈরি করে প্রতিবেশীদের জন্য বা অবসরের সময়ে। অনেকেরই তীব্র প্রতিযোগিতা আর অর্থের অভাবে নতুন সূতা পেতে কষ্ট হয়। এ গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, এক সময় তাঁদের ঘরে ঘরে তাঁত ছিল, আর তাঁতের কাপড়ের চাহিদা ছিল আকাশUAGE। তবে এখন এই শিল্পের অবস্থা খুবই উদ্বেগজনক। ইউরোপ আমেরিকা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুরনো তাঁত শিল্পের সূতী কাপড়ের ঐতিহ্য এখনও কিছুটা জীবিত থাকলেও, নরসিংদীতে তা ধীরে ধীরে অস্তিত্ব হারাচ্ছে। নানা সমস্যার জন্য বিকাশ অব্যাহত রাখতে পারছে না এই শিল্প, যেমন প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাব, সরকারি ঋণ দুর্বলতা, রং-সুতা, উপকরণের দাম ও বাজারজাতকরণে অপ্রতুলতা। আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারার কারণে, দেশের অধিকাংশ তাঁতশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।প্রাচীন সময়ে এই তাঁতশিল্পের মাধ্যমে বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাপড় মসলিন তৈরি হত। পরে ধীরে ধীরে মোটা শাড়ী, লুঙ্গী, বিছানার চাদর ও সূতী কাপড় তৈরিতে এই কারিগররা মনোযোগী হন। এই শিল্পের গৌরবময় ইতিহাসের অন্যতম কেন্দ্র ছিল শেখেরচর বাবুরহাট, যেখানে হাজার হাজার তাঁতী তাদের তৈরী সূতী কাপড় বিক্রি করতেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারী ক্রেতারা এখানে এসে নরসিংদীর সূতী তাঁত কাপড় কিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করতেন। তবে এখন বৈচিত্র্য ও চাহিদার অভাবে এই রেওয়াজ নেই। একসময়, মেয়েদের বিয়ের জন্য তাঁত কাপড়ের গুরুত্ব ছিল অকল্পনীয়। কিন্তু বর্তমানে সেই ধারা বলয়ে পড়েছে। নব্বইয়ের দশকে লক্ষাধিক তাঁত শ্রমিক থাকলেও, আজ হিসেব মতে শতাধিকেরও কম হস্তচালিত তাঁতশিল্প টিকে আছে। করিমপুরের রূপ মিয়া জানিয়েছেন, এক সময় তাঁদের গ্রামে প্রতিটি পরিবারে তাঁত ছিল। এখন শুধু কিছু পরিবারের মধ্যে গামছা তৈরির কাজ চালানো হয়। এই ব্যবসাও ঝুঁকির মধ্যে চলে এসেছে। তিনি বলছেন, এখনকার বাজারে এই গামছার চাহিদা কম। অপ্রচলিত হয়ে পড়েছে। এখন এই শিল্প ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে।বিসিকের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, তাঁতশিল্পের সেই প্রাচীন ধারা আধুনিকার সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে পারলে এর পুনরুদ্ধার সম্ভব। তাঁতীদের জন্য তারা বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে এবং শেহেরচর বাবুরহাটের মতো বাজারে তাদের পণ্য প্রচারের পরিকল্পনা নিয়েছেন। স্বল্প সুদে ঋণের সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে, যাতে তাঁত শিল্প আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে। তবে, বেশিরভাগ উদ্যোক্তা ও কারিগর এখনই এই শিল্পের ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদী নয়। পুরো জেলাতে এখন এই ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প সংকটে পড়ে গেছে, আর এর রক্ষাকবচ হিসেবে এখনো কেউ এগিয়ে আসেনি।