নয়াদিল্লির তীব্র বায়ুদূষণের কারণে শহরের অন্যতম ঐতিহাসিক মোগল স্থাপনা, লালকেল্লার দেওয়ালে ‘কালো আবরণ’ তৈরি হয়েছে বলে একটি গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই প্রাচীন স্থাপনার দেওয়ালে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলস্বরূপ জমে থাকা ধূলিকণার স্তর বর্তমানে প্রায় ০.০৫ মিলিমিটার থেকে ০.৫ মিলিমিটার পর্যন্ত গভীরতা অর্জন করেছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই কালো আবরণ লালকেল্লার সূক্ষ্ম নকশা, খোদাই এবং স্থাপত্যের অনেক অংশই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এটি এই ঐতিহাসিক স্থাপনার উপর বায়ু দূষণের প্রভাব নিয়ে করা প্রথম সম্পূর্ণ গবেষণা।
বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম দিল্লির বায়ু মানের অবনতি নিয়মিত খবরের শিরোনাম হয়, বিশেষ করে শীতকালে। সংরক্ষণবিদরা আগেই সতর্ক করেছিলেন যে, দীর্ঘস্থায়ী দূষণ রাজধানীসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার ক্ষতি করছে। ২০১৮ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বলেছিলেন, সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে নির্মিত ১৭০০ শতকের তাজমহল বায়ু ও পানিসংক্রান্ত দূষণের কারণে হলদে এবং বাদামি রঙের হয়ে যাচ্ছে, এবং উত্তর প্রদেশ সরকারের জন্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
গবেষণাটি পিয়ার-রিভিউ করা ওপেন অ্যাক্সেস বৈজ্ঞানিক জার্নাল হেরিটেজে ২০২৪ সালের জুনে প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে ভারতের ও ইতালির গবেষকরা ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দিল্লির বায়ুমানের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেন। তারা কেল্লার বিভিন্ন দেওয়াল থেকে কালো আবরণ সরালে রাসায়নিক গঠন পরীক্ষা করেন এবং দেখতে পান, বাতাসে থাকা ধুলিকণা ও দূষকের কারণে এই কালো স্তর গঠিত হয়েছে। এই স্তর গম্বুজ, খিলান ও সূক্ষ্ম পাথরের খোদাইসহ বিভিন্ন স্থাপত্যের অংশে ক্ষতি করছে, এমনকি দেওয়ালে ফোস্কা ও খোসা ওঠার প্রমাণও পাওয়া গেছে।
গবেষণার মতে, পিএম ২.৫ ও পিএম ১০ ধুলিকণার প্রকার সাধারণত পাথরের পৃষ্ঠে ধুলিকণার জমার প্রধান কারণ। ধীরে ধীরে এই ধুলি স্তর জমে কালো রঙ ধারণ করে, যা সঠিক সময়ে রোধ করা সম্ভব। গবেষকরা পাথরের রক্ষণাবেক্ষণে সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, কালো আবরণের সৃষ্টি মূলত একটি অপ্রতিরোধ্য প্রক্রিয়া নয়; প্রথমে এটি পাতলা স্তর হিসেবে গঠিত হয় এবং উপযুক্ত সংরক্ষণ পদ্ধতি অবলম্বন করলে এটিকে সহজেই সরানো বা কমানো সম্ভব। তারা সুপারিশ করেছেন, পাথরকে সুরক্ষিত রাখতে বিশেষ ধরনের সিল্যান্ট বা আবরণ প্রয়োগ করলে এই ধূসর প্রক্রিয়ার গতি রোধ বা কমানো যেতে পারে।
এই গবেষণাপত্র আমাদের সতর্ক করে বলছে, সময়মতো সংরক্ষণ ব্যবস্থা না নিলে আমাদের এই ঐতিহাসিক ধন-সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।