ইসরায়েলের বিরোধী দলের সংসদ সদস্য আভিগদর লাইবারম্যান গত শুক্রবার সতর্ক করে বলেছেন যে, আসন্ন সুখ্কোট উৎসবের সময়ে ইসরায়েলির উচিত তাদের আশ্রয়কেন্দ্রের কাছাকাছি থাকার প্রস্তুতি নেওয়া। তিনি বিশ্বাস করেন, গত জুনের সংঘর্ষের পর থেকে ইরান দ্রুত শক্তি বাড়াচ্ছে এবং তারা আবারও একটি আকস্মিক হামলার পরিকল্পনা করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে যে, ইসরায়েলি বাহিনী—আইডিএফের হোম ফ্রন্ট কমান্ড—বলেন, তাদের সামরিক সতর্কতা বা নির্দেশনায় এখনো পরিবর্তন আসেনি। অন্যদিকে, প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা লাইবারম্যানের এই বক্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে সমালোচনা করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক্সে লাইবারম্যান লিখেছেন, ‘যারা ভাবছেন ইরানের সঙ্গে সংঘাত শেষ হয়ে গেছে, তারা ভুল করছে। ইরানিরা প্রতিদিন নিজের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে। তারা আবারও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে কাজ শুরু করেছে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘এ কারণেই বিশাল দেশগুলো আবারও ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের স্ন্যাপব্যাক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে। মনে হচ্ছে, ইরান এবার আমাদের চমকে দিতে চাইছে।’
আরেকদিকে, তিনি বলেন, ‘সুক্কোট উৎসব সামনে রেখে, গত সোমবার থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সাত দিনব্যাপী এই উৎসবের জন্য সতর্কতার সঙ্গে উৎসব পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন। পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান, কিন্তু সাবধানে থাকুন এবং আশ্রয়কেন্দ্রের কাছাকাছি থাকুন।’ তিনি বর্তমান সরকারের উদ্যোগ ও ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘এই সরকারকে ভরসা করা সম্ভব নয়। যতক্ষণ না তারা আমাদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে, আমাদের নিজেদের ও আইডিএফের ওপর নির্ভর করতে হবে।’
ইসরায়েলি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা লাইবারম্যানের এই মন্তব্যকে ‘অদ্ভুত ও বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। চ্যানেল ১৩-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, এই ধরনের মন্তব্য ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করতে পারে। যদি কেউ মনে করে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে আক্রমণ করবে, তাহলে ইরান প্রতিরোধে আগে থেকে শক্তি বাড়াতে পারে, যা মারাত্মক ভুল।
ওয়াই-নেটের প্রতিবেদনে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানে এই মন্তব্যের জন্য সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে না, কারণ এ ধরনের কথার কোনো ভিত্তি নেই।
উল্লেখ্য, ইসরায়েল বেইতেনু দলের প্রধান ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী লাইবারম্যান দীর্ঘদিন ধরেই আমেরিকার মধ্যস্থতায় জুনে হওয়া যুদ্ধবিরতিকে সমালোচনায় মুখর। তার মতে, এই অবস্থা চলতেই থাকলে দুই-তিন বছরের মধ্যে আবারও মারাত্মক যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হবে। জুলাই মাসে, তিনি বলেন, ইরান প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত, এবং ইসরায়েলের উচিত আগে থেকে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া।
১৩ জুন, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র ও সামরিক নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এর কিছুদিন পরে, ইরান ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে হামলা চালায়। ২৪ জুন এই যুদ্ধ শেষ হলেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুই দিন পর ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়।
ইরানের শীর্ষ নেতৃত্ব গত সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েল ধ্বংসের শপথ নিলেও, তারা দাবি করে যে, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি তারা করছে না। তবে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে দেশটি এতটাই এগিয়ে গেছে যে, সেটি অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার হতে পারে—এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, যা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।