গাজায় ইসরায়েলি হামলার পরিমাণ ভয়াবহ রূপ নিয়ে দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, ২০২৩ সালে ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে এখন পর্যন্ত মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ১৭৩ জন। এর মধ্যে শিশু নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার ১৭৯ জন। আহত হয়েছে আরও এক লাখ ৬৯ হাজার ৭৮০ জন।
মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, এই হামলার কারণে হাসপাতাল ও চিকিৎসা সম্পর্কিত অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭০১ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন এবং আটক করা হয়েছে আরও ৩৬২ জন। অবরোধ এবং ধারাবাহিক বোমাবর্ষণে গাজায় সৃষ্টি হয়েছে এক মানবিক বিপর্যয়, প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৬০ জন, যাদের মধ্যে শিশু সংখ্যা ১৫৪। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গাজা উপত্যকার একমাত্র ১৮ শতাংশ এলাকা এখনো উচ্ছেদ বা সামরিক দখল থেকে মুক্ত। অগণিত বাস্তুচ্যুত মানুষ এখন দক্ষিণে আশ্রয় লাভ করছে। গত আগস্টের পর থেকেই গাজা শহর থেকে প্রায় ৪ লাখ ১৭ হাজার মানুষ বিভিন্নত্রিতে অপরিচিত স্থান খুঁজে চলেছেন।
এ পরিস্থিতিতে মিসরের শার্ম আল শেখ শহরে হামাস এবং ইসরায়েলি প্রতিনিধিদের মধ্যে পরোক্ষ চলমান আলোচনা শুরু হয়েছে। এই বৈঠকটি অংশ হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাবের আলোচনা চলছে। মূল জোর দেওয়া হচ্ছে বন্দি বিনিময় বিষয়ক চুক্তিতে। ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। হামাস জানিয়েছে, তারা কিছুটা রাজি হয়েছে, তবে গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন ও নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর তাদের আপত্তি এখনও রয়েছে।
প্রথম দফার আলোচনা ‘ইতিবাচক পরিবেশে’ শেষ হয়েছে বলে জানানো হয়েছে মিসরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের মাধ্যমে। আগামী মঙ্গলবারও এই আলোচনায় অংশ নেবে হামাস, মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা। ট্রাম্প আশাবাদ প্রকাশ করেছেন, খুব দ্রুত বন্দি রেহাই ও মুক্তির ঘোষণা আসবে। তার ২০ দফার পরিকল্পনায় যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তার প্রবেশ, এবং সীমিত বন্দি বিনিময়ের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
৭ অক্টোবর হামলার দু’বছর পূর্তি উপলক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে নানা প্রতিক্রিয়া আসছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জোর দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধবিরতিসহ জিম্মি মুক্তির জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। গ্রিস, ইতালি ও সুইডেনের শীর্ষ নেতারাও ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে স্থায়ী সমাধানের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
তবে, ইসরায়েলে জিম্মি পরিবারের সদস্যরা এই পরিস্থিতিতে আরও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। তেল আভিভের বিভিন্ন স্থান protests হচ্ছে। অনেক পরিবার অভিযোগ করে বলছেন, তাদের প্রিয়জনদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের যথাযথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কিছু পরিবার নোবেল কমিটিকে চিঠি লিখেও ট্রাম্পের শান্তি উদ্যোগকে স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। ২১ অক্টোবর ইসরায়েলে সরকারিভাবে এই দিনকে স্মরণীয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়নি, তবে নানা প্রাইভেট সংগঠন, কনসার্ট ও সমাবেশের মাধ্যমে দিনটি স্মরণ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, গাজায় ইসরায়েলি হামলা এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহামারীর মতো গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২১ জন নিহত ও ৯৬ জন আহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রবেশাধিকার বন্ধ থাকায় এ পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য যাচাই করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।