১০:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
বাজারে ক্ষতিকর রঙ মেশানো ‘মুগ’ ডাল! নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সতর্কতা নির্বাচনী উৎসবের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন, ভোটে জনগণের আস্থা জোরদার মির্জা ফখরুল: সরকারের এখতিয়ার নয় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি প্রধান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দ্রুত গণভোটের সিদ্ধান্ত নেবেন ডিসেম্বরে দেশের দেড় কোটি মানুষ খাদ্যসংকটে পড়বে জাতীয় নির্বাচনের দিন বা আগে গণভোটের সুপারিশ সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ঐকমত্য কমিশন ‘জাতীয় অনৈক্যের’ প্রচেষ্টা নিয়েছে ভোটার হতে গেলে ঘুষ দরকার: দুর্নীতির খবর শিরোনাম ঘূর্ণিঝড় ‘মেলিসা’ ২৫০ কিমি ঘণ্টায় তাণ্ডব, ক্যারিবীয় অঞ্চলে নিহত ৭ অ্যাটর্নি অফিসে ‘ফ্যাসিস্টের দোসরদের’ নিয়োগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

সোনাইমুড়ীর নির্বাচন অফিসে নানা অভিযোগ ও দুর্নীতির অভিযোগ

সোনাইমুড়ী উপজেলার নির্বাচন অফিসে সম্প্রতি বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ ওঠেছে, যা এলাকায় ক্ষোভ ও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন ভুক্তভোগীরা জানান, অফিসের কর্মকর্তাদের দ্বারা হয়রানি, ঘুষ ও দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। পরীক্ষিত তথ্য অনুসারে, ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা তাসলিমা আক্তার, যিনি ধরনা করছেন নাজিরপুর গ্রামে তাঁর স্বামীর বাড়ির কাছেই, তিনি গত ২৮ অক্টোবর সকাল ৯টায় পিতার বাড়ির ঠিকানায় ভোটার হতে উপজেলা নির্বাচন অফিসে যান। সেখানে প্রবেশের পর একজন নির্বাচনী কর্মকর্তা টাকা দাবি করেন। অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে এবং তার বৃদ্ধ মা আলেয়া বেগমকে বের করে দেওয়া হয়। পুনরায় রুমে প্রবেশের চেষ্টা করলে অফিসের কর্মকর্তা রীতিমত রেগে গালিগালাজ শুরু করেন। এই ঘটনা নিয়ে মা-মেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, উপজেলা পরিষদের ড্রাইভার মনির হোসেন, যিনি এখন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গাড়ি চালান, তার এক আত্মীয় ভোটার হতে আবেদন করেছিলেন। জন্মনিবন্ধনে বয়সের ত্রুটি দেখিয়ে তাকে হয়রানি করতে থাকেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। পরে তিনি বিভিন্ন দুর্ব্যবহার ও টাকা দাবি নিয়ে অভিযোগ করেন।

এছাড়াও, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল অফিসের পিয়ন সালাউদ্দিন জানান, তার চাচাতো ভাই মাইনুল ইসলাম ভোটার হতে গিয়ে জন্মনিবন্ধনের ত্রুটি দেখিয়ে প্রত্যাখ্যানের শিকার হন। পরে, এক ব্যক্তির মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা চুক্তিতে ভোটার হয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। একইভাবে, বারগাঁও ইউনিয়নের পলাশ জানিয়েছেন, তার ফুফাতো ভাইয়ের নামের আগে ‘মো.’ ক্ষত্রে অনলাইনে আবেদন করার পর নানা অজুহাতে সেটি বাতিল করে দেন অফিসের কর্তৃপক্ষ।

নির্বাচন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ, যোগদান করার পর থেকেই আবু তালেব নামে এই কর্মকর্তা নানা রটনা, হয়রানি ও ঘুষের জন্য পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি দিনের পর দিন অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরও কাজের অপ্রাপ্তি, অপারগতা ও দুর্ব্যবহার চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অফিসের দরজা বন্ধ রেখে পর্দার আড়ালে কাজের অজুহাতে নানা অসুবিধা সৃষ্টি করেন তিনি। এই পরিস্থিতির কারণে পাসপোর্ট, চাকরি ও অন্যান্য জরুরি কাজপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বিপাকে পড়েছেন। নতুন ভোটার তালিকা, জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধন ও ভোটার স্থানান্তরসহ নানা কাজের জন্য তারা ঘুষ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ফরিদপুরের নগরকান্দার উপজেলা থেকে যোগদানকারী নির্বাচনী কর্মকর্তারাও এই দুর্নীতির ্বিস্তার ঘটিয়েছেন।

প্রথমে বলে রাখা ভালো, স্থানীয় এক সরকারি কর্মচারী নাম প্রকাশ না করলেও জানান, যখন মা ও সন্তানের বয়সের অমিল থাকলে আবেদন কেটে দেয়া হয়, তখন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সেই আবেদনগুলো ড্রয়ারেই রাখেন। পরে, কেউ টাকা দিয়ে ভোটার হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। তদন্তের জন্যও গোপন বা অতিরিক্ত টাকা চাওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। কিছু ক্ষেত্রে, যাচাই-বাছাই না করে ঠিকানা স্থানান্তর বা অন্য নবায়নের কাজেও দীর্ঘ সময় গ্রেট করা হয়, যার জন্য দরিদ্র সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত।

সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু তালেব এবিষয়ে বলছেন, তিনি যোগদান করার পর বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তবে তিনি কোনো অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করেননি। অন্যদিকে, নাছরিন আক্তার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বলেছেন, উপস্থিত অভিযোগের বিষয়ে কয়েকবার সতর্ক করা হয়েছে। মো. সাদেকুল ইসলাম, নোয়াখালী জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা, বলেছেন, যদি সত্যিই কেউ ভোটার হতে টাকা নেওয়ার প্রমাণ দিতে পারেন, তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই সব অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন, যাতে দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধ হয়ে সত্যতা প্রকাশ পায়।

ট্যাগ :
সর্বাধিক পঠিত

সোনাইমুড়ীর নির্বাচন অফিসে নানা অভিযোগ ও দুর্নীতির অভিযোগ

প্রকাশিতঃ ১১:৫০:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

সোনাইমুড়ী উপজেলার নির্বাচন অফিসে সম্প্রতি বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ ওঠেছে, যা এলাকায় ক্ষোভ ও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন ভুক্তভোগীরা জানান, অফিসের কর্মকর্তাদের দ্বারা হয়রানি, ঘুষ ও দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। পরীক্ষিত তথ্য অনুসারে, ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা তাসলিমা আক্তার, যিনি ধরনা করছেন নাজিরপুর গ্রামে তাঁর স্বামীর বাড়ির কাছেই, তিনি গত ২৮ অক্টোবর সকাল ৯টায় পিতার বাড়ির ঠিকানায় ভোটার হতে উপজেলা নির্বাচন অফিসে যান। সেখানে প্রবেশের পর একজন নির্বাচনী কর্মকর্তা টাকা দাবি করেন। অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে এবং তার বৃদ্ধ মা আলেয়া বেগমকে বের করে দেওয়া হয়। পুনরায় রুমে প্রবেশের চেষ্টা করলে অফিসের কর্মকর্তা রীতিমত রেগে গালিগালাজ শুরু করেন। এই ঘটনা নিয়ে মা-মেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, উপজেলা পরিষদের ড্রাইভার মনির হোসেন, যিনি এখন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গাড়ি চালান, তার এক আত্মীয় ভোটার হতে আবেদন করেছিলেন। জন্মনিবন্ধনে বয়সের ত্রুটি দেখিয়ে তাকে হয়রানি করতে থাকেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। পরে তিনি বিভিন্ন দুর্ব্যবহার ও টাকা দাবি নিয়ে অভিযোগ করেন।

এছাড়াও, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল অফিসের পিয়ন সালাউদ্দিন জানান, তার চাচাতো ভাই মাইনুল ইসলাম ভোটার হতে গিয়ে জন্মনিবন্ধনের ত্রুটি দেখিয়ে প্রত্যাখ্যানের শিকার হন। পরে, এক ব্যক্তির মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা চুক্তিতে ভোটার হয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। একইভাবে, বারগাঁও ইউনিয়নের পলাশ জানিয়েছেন, তার ফুফাতো ভাইয়ের নামের আগে ‘মো.’ ক্ষত্রে অনলাইনে আবেদন করার পর নানা অজুহাতে সেটি বাতিল করে দেন অফিসের কর্তৃপক্ষ।

নির্বাচন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ, যোগদান করার পর থেকেই আবু তালেব নামে এই কর্মকর্তা নানা রটনা, হয়রানি ও ঘুষের জন্য পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি দিনের পর দিন অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরও কাজের অপ্রাপ্তি, অপারগতা ও দুর্ব্যবহার চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অফিসের দরজা বন্ধ রেখে পর্দার আড়ালে কাজের অজুহাতে নানা অসুবিধা সৃষ্টি করেন তিনি। এই পরিস্থিতির কারণে পাসপোর্ট, চাকরি ও অন্যান্য জরুরি কাজপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বিপাকে পড়েছেন। নতুন ভোটার তালিকা, জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধন ও ভোটার স্থানান্তরসহ নানা কাজের জন্য তারা ঘুষ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ফরিদপুরের নগরকান্দার উপজেলা থেকে যোগদানকারী নির্বাচনী কর্মকর্তারাও এই দুর্নীতির ্বিস্তার ঘটিয়েছেন।

প্রথমে বলে রাখা ভালো, স্থানীয় এক সরকারি কর্মচারী নাম প্রকাশ না করলেও জানান, যখন মা ও সন্তানের বয়সের অমিল থাকলে আবেদন কেটে দেয়া হয়, তখন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সেই আবেদনগুলো ড্রয়ারেই রাখেন। পরে, কেউ টাকা দিয়ে ভোটার হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। তদন্তের জন্যও গোপন বা অতিরিক্ত টাকা চাওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। কিছু ক্ষেত্রে, যাচাই-বাছাই না করে ঠিকানা স্থানান্তর বা অন্য নবায়নের কাজেও দীর্ঘ সময় গ্রেট করা হয়, যার জন্য দরিদ্র সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত।

সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু তালেব এবিষয়ে বলছেন, তিনি যোগদান করার পর বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তবে তিনি কোনো অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করেননি। অন্যদিকে, নাছরিন আক্তার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বলেছেন, উপস্থিত অভিযোগের বিষয়ে কয়েকবার সতর্ক করা হয়েছে। মো. সাদেকুল ইসলাম, নোয়াখালী জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা, বলেছেন, যদি সত্যিই কেউ ভোটার হতে টাকা নেওয়ার প্রমাণ দিতে পারেন, তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই সব অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন, যাতে দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধ হয়ে সত্যতা প্রকাশ পায়।