১০:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
তীব্র যানজটে আটকা পড়ে সড়ক উপদেষ্টা মোটরসাইকেলে গন্তব্যে পৌঁছেছেন ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের পাশে আবর্জনার স্তূপ ঢেকে দেওয়া হলো বিশিষ্ট উপদেষ্টার আগমনের জন্য পাঁচ দিন ধরে সাগরে ভাসমান ২৬ জেলেকে উদ্ধার করলো নৌ বাহিনী মেনন-পলক-দস্তগীরসহ চারজনের বিরুদ্ধে নতুন মামলায় গ্রেফতার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ: দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রত্যয় আওয়ামী লীগের বিচারকাজের জন্য আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু জয়পুরহাটের কানাইপুকুর গ্রামে বিরল শামুকখোল পাখির অভয়ারণ্য শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়ার প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন সিইসির মনে অবস্থান: এবারের নির্বাচন জীবনশেষের সুযোগ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিদায় সাক্ষাৎ জাতিসংঘের অভিবাসী সমন্বয়কের

ভারতীয় তরুণদের স্বপ্ন ভেঙে দিচ্ছে ট্রাম্পের ভিসা নীতি?

কলকাতা থেকে খড়্গপুরের আইআইটি চতুর্থ বর্ষের মেধাবী ছাত্র স্বপ্নিল চক্রবর্তী (ছদ্মনাম) বহু স্বপ্ন নিয়ে দেশের বাইরে পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা করতেন। তিনি ভাবতেন, পরের বছরই হয়তো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে মোটা বেতনে চাকরি করে মার্কিনæn স্বপ্ন সত্যি করবেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন ভিসা নীতির কারণে এই স্বপ্ন অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি।

স্বপ্নিল ফোনে বললেন, “আমাদের ব্যাচের অনেকেই এখন আর গ্র্যাজুয়েশনের পরেই আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন না। তবে আমার জন্য এটা এখনও গুরুত্বপূর্ণ, আমি ছোট থেকেই ভাবছিলাম আইআইটি পাশ করে কিছু বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাটানোর।” তবে এখন পরিস্থিতি একেবারেই বদলে গেছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে এইচ ১বি ভিসার জন্য ফি বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ডলার, যা আগের তুলনায় অনেক বেশি। আসলে এই ক্যাটাগরির ভিসার জন্য পুরোনো ফি ছিল মাত্র ২০০০ থেকে ৫০০০ ডলার, যা এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চড়া ফির ফলে আমেরিকায় চাকরি পাওয়া অনেক টেকনিক্যাল পেশাজীবীর জন্য এই রুট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই পরিবর্তন মূলত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন, বিশেষ দক্ষতা অর্জনকারীদের জন্য প্রযোজ্য, কারণ সাধারণ বা মাঝারি মানের পেশাজীবীরা এত বড় খরচের জন্য প্রস্তুত থাকবেন না। এই পরিস্থিতি ভারতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে, কারণ প্রতি বছর এইচ ১বি ভিসার ৭০ শতাংশই পান ভারতীয় নাগরিকরা। গত আর্থিক বছরেও এই সংখ্যা ছিল ৭১ শতাংশ, অর্থাৎ ১০০ জনের মধ্যে ৭১ জনই ভারতীয়।

চীনা নাগরিকরাও কিছু ভিসা পান কিন্তু তাদের সংখ্যা তুলনায় কম। বেশিরভাগ এইচ ১বি ভিসার দাবিদার হতে পারে ভারতীয়ই। ভারতের বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে টাটা কনসালটেন্সি, ইনফোসিস প্রভৃতি এই ভিসার বড় গ্রাহক। মার্কিন সরকারের ওয়েবসাইট বলছে, চলতি অর্থবছরে মে পর্যন্ত ১ লাখ ৭ হাজারেরও বেশি এইচ ১বি ভিসা অনুমোদিত হয়েছে, এর মধ্যে ১৩ শতাংশই গেছে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে। এই নতুন পরিস্থিতির কারণে ভবিষ্যতে এমন নিয়মগুলো আরও কঠোর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রথমে মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছিলেন, এইচ ১বি ভিসার তিন বছরের জন্য প্রত্যেক বছর এক লাখ ডলার ফি দিতে হবে। পরে পরিষ্কার হয়, এটি এককালীন পেমেন্ট। তাছাড়া মেডিক্যাল ক্ষেত্রে আসা বিশেষজ্ঞরাও এই বেড়ে যাওয়া ফির থেকে ছাড় পাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এর ফলে স্বপ্নিলের মতো অসংখ্য ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রযুক্তি শিক্ষার্থীরা এখন দেশের ভেতরে চাকরির খোঁজে আছেন।

সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ভারতীয়রা ব্যাপকভাবে মন্তব্য করছেন। তারা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই নীতি এইচ ১বি ভিসার পথে বড় আঘাত এনে দিয়েছে, ফলে এই রুটে ভারতের তরুণেরা আর আমেরিকা যেতে পারবেন না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আইআইটি বা ভারতের অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপকরা মনে করছেন যে, এইচ ১বি ভিসার বন্ধ হয়ে গেলে ইউএস এর ইমিগ্রেশন নীতির ওঠাপড়ার কারণে এটি দীর্ঘমেয়াদে খুব বড় প্রভাব ফেলবে না। বর্তমান পরিস্থিতি অস্থায়ী, কারণ ইতিহাস বলছে, আমেরিকা নিজস্ব স্বার্থের বলয়ে বিভিন্ন সময় নীতি বদল করে। কুনপুর আইআইটির সাবেক শিক্ষার্থী অজয় কুমার কয়াল বলেন, “বর্তমানে ভারতীয় তরুণদের জন্য ভবিষ্যৎ অন্ধকার মনে হলেও বেশিরভাগের ধারণা, এই পরিস্থিতির সমাধান হবে। চিরকালই এই পরিস্থিতি চলবে না।”

নতুন নিয়মের ফলে অনেকেরই মনে হচ্ছে, ট্রাম্পের এই নীতি ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বড় আঘাত হানবে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই লিখছেন, যেখানে আজ কোটি কোটি বাঙালি আইটি ওয়ার্কার কাজ করছে, সেখানে এইচ ১বি ভিসার বন্ধ মানে দেশের স্বার্থে বড়ো এক ধাক্কা। এই চাকরির সুযোগে ভারতীয়রা আন্তর্জাতিক বাজারে নিজের পা ফেলতেন। পাশাপাশি অনেকেই জানাচ্ছেন, এই ভিসা না থাকলে অনেক ভারতীয় কোম্পানি নিজেদের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমিয়ে দিচ্ছে। এসব কোম্পানি ভারতে বলছে, তারা বিদেশি পেশাজীবীদের কাজে লাগিয়ে ভারতে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। মূলত, এইচ ১বি ভিসা ভারতীয় অর্থনীতির বড় শক্তির একটি অংশ ছিল। তাই এই পরিস্থিতিতে দেশের IT খাতে বড় পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করছে_many experts and industry leaders.

ট্যাগ :
সর্বাধিক পঠিত

দৌলতপুরে মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান, অবৈধ জাল জব্দ ও জেলেকে জরিমানা

ভারতীয় তরুণদের স্বপ্ন ভেঙে দিচ্ছে ট্রাম্পের ভিসা নীতি?

প্রকাশিতঃ ১০:৫৪:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কলকাতা থেকে খড়্গপুরের আইআইটি চতুর্থ বর্ষের মেধাবী ছাত্র স্বপ্নিল চক্রবর্তী (ছদ্মনাম) বহু স্বপ্ন নিয়ে দেশের বাইরে পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা করতেন। তিনি ভাবতেন, পরের বছরই হয়তো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে মোটা বেতনে চাকরি করে মার্কিনæn স্বপ্ন সত্যি করবেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন ভিসা নীতির কারণে এই স্বপ্ন অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি।

স্বপ্নিল ফোনে বললেন, “আমাদের ব্যাচের অনেকেই এখন আর গ্র্যাজুয়েশনের পরেই আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন না। তবে আমার জন্য এটা এখনও গুরুত্বপূর্ণ, আমি ছোট থেকেই ভাবছিলাম আইআইটি পাশ করে কিছু বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাটানোর।” তবে এখন পরিস্থিতি একেবারেই বদলে গেছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে এইচ ১বি ভিসার জন্য ফি বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ডলার, যা আগের তুলনায় অনেক বেশি। আসলে এই ক্যাটাগরির ভিসার জন্য পুরোনো ফি ছিল মাত্র ২০০০ থেকে ৫০০০ ডলার, যা এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চড়া ফির ফলে আমেরিকায় চাকরি পাওয়া অনেক টেকনিক্যাল পেশাজীবীর জন্য এই রুট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই পরিবর্তন মূলত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন, বিশেষ দক্ষতা অর্জনকারীদের জন্য প্রযোজ্য, কারণ সাধারণ বা মাঝারি মানের পেশাজীবীরা এত বড় খরচের জন্য প্রস্তুত থাকবেন না। এই পরিস্থিতি ভারতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে, কারণ প্রতি বছর এইচ ১বি ভিসার ৭০ শতাংশই পান ভারতীয় নাগরিকরা। গত আর্থিক বছরেও এই সংখ্যা ছিল ৭১ শতাংশ, অর্থাৎ ১০০ জনের মধ্যে ৭১ জনই ভারতীয়।

চীনা নাগরিকরাও কিছু ভিসা পান কিন্তু তাদের সংখ্যা তুলনায় কম। বেশিরভাগ এইচ ১বি ভিসার দাবিদার হতে পারে ভারতীয়ই। ভারতের বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে টাটা কনসালটেন্সি, ইনফোসিস প্রভৃতি এই ভিসার বড় গ্রাহক। মার্কিন সরকারের ওয়েবসাইট বলছে, চলতি অর্থবছরে মে পর্যন্ত ১ লাখ ৭ হাজারেরও বেশি এইচ ১বি ভিসা অনুমোদিত হয়েছে, এর মধ্যে ১৩ শতাংশই গেছে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে। এই নতুন পরিস্থিতির কারণে ভবিষ্যতে এমন নিয়মগুলো আরও কঠোর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রথমে মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছিলেন, এইচ ১বি ভিসার তিন বছরের জন্য প্রত্যেক বছর এক লাখ ডলার ফি দিতে হবে। পরে পরিষ্কার হয়, এটি এককালীন পেমেন্ট। তাছাড়া মেডিক্যাল ক্ষেত্রে আসা বিশেষজ্ঞরাও এই বেড়ে যাওয়া ফির থেকে ছাড় পাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এর ফলে স্বপ্নিলের মতো অসংখ্য ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রযুক্তি শিক্ষার্থীরা এখন দেশের ভেতরে চাকরির খোঁজে আছেন।

সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ভারতীয়রা ব্যাপকভাবে মন্তব্য করছেন। তারা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই নীতি এইচ ১বি ভিসার পথে বড় আঘাত এনে দিয়েছে, ফলে এই রুটে ভারতের তরুণেরা আর আমেরিকা যেতে পারবেন না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আইআইটি বা ভারতের অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপকরা মনে করছেন যে, এইচ ১বি ভিসার বন্ধ হয়ে গেলে ইউএস এর ইমিগ্রেশন নীতির ওঠাপড়ার কারণে এটি দীর্ঘমেয়াদে খুব বড় প্রভাব ফেলবে না। বর্তমান পরিস্থিতি অস্থায়ী, কারণ ইতিহাস বলছে, আমেরিকা নিজস্ব স্বার্থের বলয়ে বিভিন্ন সময় নীতি বদল করে। কুনপুর আইআইটির সাবেক শিক্ষার্থী অজয় কুমার কয়াল বলেন, “বর্তমানে ভারতীয় তরুণদের জন্য ভবিষ্যৎ অন্ধকার মনে হলেও বেশিরভাগের ধারণা, এই পরিস্থিতির সমাধান হবে। চিরকালই এই পরিস্থিতি চলবে না।”

নতুন নিয়মের ফলে অনেকেরই মনে হচ্ছে, ট্রাম্পের এই নীতি ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বড় আঘাত হানবে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই লিখছেন, যেখানে আজ কোটি কোটি বাঙালি আইটি ওয়ার্কার কাজ করছে, সেখানে এইচ ১বি ভিসার বন্ধ মানে দেশের স্বার্থে বড়ো এক ধাক্কা। এই চাকরির সুযোগে ভারতীয়রা আন্তর্জাতিক বাজারে নিজের পা ফেলতেন। পাশাপাশি অনেকেই জানাচ্ছেন, এই ভিসা না থাকলে অনেক ভারতীয় কোম্পানি নিজেদের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমিয়ে দিচ্ছে। এসব কোম্পানি ভারতে বলছে, তারা বিদেশি পেশাজীবীদের কাজে লাগিয়ে ভারতে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। মূলত, এইচ ১বি ভিসা ভারতীয় অর্থনীতির বড় শক্তির একটি অংশ ছিল। তাই এই পরিস্থিতিতে দেশের IT খাতে বড় পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করছে_many experts and industry leaders.