০২:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ, গুজবে মনোযোগ না দেওয়ার আহ্বান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করল এনসিটিবি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজ আরও সাত রাজনৈতিক দলের বৈঠক ৩৮ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে সহকারী কর কমিশনারকে বরখাস্ত অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে কিছুটা হতাশা প্রকাশ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাকৃবিতে বহিরাগতদের হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিন্দা ও প্রতিবাদ দেশের মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৬৩ লাখ ৭ হাজার ৫০৪ আগস্টে গণপিটুনির হত্যা বেড়েছে, জুলাইয়ের তুলনায় বেশি চবি হাসপাতালে দফায় দফায় সংঘর্ষে দেড় শতাধিক আহত মঙ্গলবার আরও ৭ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা

শি, পুতিন ও মোদির ঐক্যের বার্তা

যুক্তরাষ্ট্রের শুরু করা বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গতকাল সোমবার বিশ্বের নজর ছিল তিন শীর্ষ নেতার বন্ধুত্বপূর্ণ অভিবাদনে। সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে ক্যামেরাবন্দি সেই দৃশ্য এখন আলোচনার বিষয়। ঐশ্বর্যশালী এই নেতাদের মধ্যে ছিলেন শি চিনপিং, ভ্লাদিমির পুতিন এবং নরেন্দ্র মোদি।

نিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সভা কক্ষে প্রবেশের মুহূর্তে দেখা যায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হাত মেলাচ্ছেন। সেই সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা সরাসরি চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের কাছাকাছি যান এবং একসঙ্গে হাসি-খুশি বিন্দুতে হাত মেলে অভিবাদন জানান। তখন তিনজনের আশপাশে ছিলেন অনুবাদকসহ অন্য কর্মকর্তারা।

এক পর্যায়ে পুতিন হেসে ওঠেন, যা পুরো দৃশ্যকে আরও উচ্ছল করে তোলে। মোদির হাসিও ছিল মনোযোগী ও আন্তরিক। এই বলিষ্ঠ দৃশ্যের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে ভারতের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। সেখানে দেখা গেছে, পুতিন ও মোদি হেঁটে আসার সময় পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। এই অংশটিও টেলিভিশনে বারবার দেখানো হয়েছে, যা বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই দৃশ্যের মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে এক শক্তিশালী বার্তা। শি চিনপিং ও ভ্লাদিমির পুতিনের বন্ধুত্ব খুবই দৃঢ়, যা যুক্তরাষ্ট্রকে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা যেতে পারে। তারা বিশ্বকে অন্য দেশের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে নিজেদের প্রস্তুতি দেখাতে চান। মোদি চীনের সঙ্গে ভারতের গভীর বন্ধুত্বের প্রমাণ দিতে চেয়েছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, এমন সাম্প্রতিক দৃশ্য গুরুত্বপূর্ণ কেননা এটাই বর্তমানে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মুখ্য। ভারতের তক্ষশিলা ইনস্টিটিউশনের ইন্দো-প্যাসিফিক স্টাডিজের প্রধান মনোজ কেওয়ালরামানি বলছেন, হোয়াইট হাউসকে বুঝতে হবে যে তাদের নীতি অন্য দেশগুলোকে বিকল্প খুঁজতে বাধ্য করছে।

চীনের তিয়ানজিনে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সম্মেলনে দেখা গেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক বিভাজন সৃষ্টি হলেও এটি নতুন সুযোগ করে দিয়েছে। এই সম্মেলনে ২০টির বেশি দেশ অংশ নিয়েছে, যেখানে বেশিরভাগই মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার। নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের কেনে আরোপিত বাধাগুলি এখন চীন-রাশিয়াকে আরও কাছাকাছি আনছে, এবং এই দেশগুলোর সম্পর্ক গভীরতর হচ্ছে।

সহিংসতা ও বিশ্ব রাজনীতিতে পরিবর্তন আসায় এবারের সম্মেলনেও নেতাদের মনোভাব উচ্ছ্বসিত। মোদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু ছবি পোস্ট করেছেন, যেখানে তিনি ভক্তি ভরে পুতিন ও শি চিনপিংয়ের সাথে আড্ডা দিচ্ছেন। ছবিগুলিতে মোদিকে হাসিমুখে পুতিনের সাথে করমর্দন ও কোলাকুলি করতে দেখা গেছে। তিনি লিখেছেন, পুতিনের সাথে দেখা করার অনুভূতি সব সময়ই আনন্দের।

অন্তর্জাতিক এই পরিস্থিতিতে মোদি-পুতিন এবং শির মধ্যকার সম্পর্কের গভীরতা নিয়ে চলমান জল্পনা উঠেছে। বিশেষ করে, ভারতের উপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কারণে ভারতের ও মার্কিন বাণিজ্য ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনার জন্য এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে বলে দাবি ওয়াশিংটনের। তবে এখনো কোনওভাবে চীন উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘটনা ঘটে নি।

এমন পরিস্থিতিতে তিন রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা কী নতুন কোনো জটিল অক্ষ তৈরি করবে, এই প্রশ্ন উঠছে। শি চিনপিং ইতোমধ্যে মোদির সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করেছেন। চীন সরকারের গণমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, শি মোদিও বলেছেন, চীন ও ভারত পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং তারা সহযোগিতার অংশীদার। শি আরও বলেন, দুদেশ একে অন্যের কাছে হুমকি নয়, বরং উন্নয়নের সুযোগ। এভাবেই এই বৈঠক ও সম্পর্কের ভবিষ্যত দিকনির্দেশনা স্পষ্ট হচ্ছে।

ট্যাগ :

শি, পুতিন ও মোদির ঐক্যের বার্তা

প্রকাশিতঃ ১০:৫৪:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের শুরু করা বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গতকাল সোমবার বিশ্বের নজর ছিল তিন শীর্ষ নেতার বন্ধুত্বপূর্ণ অভিবাদনে। সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে ক্যামেরাবন্দি সেই দৃশ্য এখন আলোচনার বিষয়। ঐশ্বর্যশালী এই নেতাদের মধ্যে ছিলেন শি চিনপিং, ভ্লাদিমির পুতিন এবং নরেন্দ্র মোদি।

نিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সভা কক্ষে প্রবেশের মুহূর্তে দেখা যায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হাত মেলাচ্ছেন। সেই সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা সরাসরি চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের কাছাকাছি যান এবং একসঙ্গে হাসি-খুশি বিন্দুতে হাত মেলে অভিবাদন জানান। তখন তিনজনের আশপাশে ছিলেন অনুবাদকসহ অন্য কর্মকর্তারা।

এক পর্যায়ে পুতিন হেসে ওঠেন, যা পুরো দৃশ্যকে আরও উচ্ছল করে তোলে। মোদির হাসিও ছিল মনোযোগী ও আন্তরিক। এই বলিষ্ঠ দৃশ্যের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে ভারতের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। সেখানে দেখা গেছে, পুতিন ও মোদি হেঁটে আসার সময় পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। এই অংশটিও টেলিভিশনে বারবার দেখানো হয়েছে, যা বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই দৃশ্যের মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে এক শক্তিশালী বার্তা। শি চিনপিং ও ভ্লাদিমির পুতিনের বন্ধুত্ব খুবই দৃঢ়, যা যুক্তরাষ্ট্রকে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা যেতে পারে। তারা বিশ্বকে অন্য দেশের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে নিজেদের প্রস্তুতি দেখাতে চান। মোদি চীনের সঙ্গে ভারতের গভীর বন্ধুত্বের প্রমাণ দিতে চেয়েছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, এমন সাম্প্রতিক দৃশ্য গুরুত্বপূর্ণ কেননা এটাই বর্তমানে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মুখ্য। ভারতের তক্ষশিলা ইনস্টিটিউশনের ইন্দো-প্যাসিফিক স্টাডিজের প্রধান মনোজ কেওয়ালরামানি বলছেন, হোয়াইট হাউসকে বুঝতে হবে যে তাদের নীতি অন্য দেশগুলোকে বিকল্প খুঁজতে বাধ্য করছে।

চীনের তিয়ানজিনে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সম্মেলনে দেখা গেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক বিভাজন সৃষ্টি হলেও এটি নতুন সুযোগ করে দিয়েছে। এই সম্মেলনে ২০টির বেশি দেশ অংশ নিয়েছে, যেখানে বেশিরভাগই মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার। নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের কেনে আরোপিত বাধাগুলি এখন চীন-রাশিয়াকে আরও কাছাকাছি আনছে, এবং এই দেশগুলোর সম্পর্ক গভীরতর হচ্ছে।

সহিংসতা ও বিশ্ব রাজনীতিতে পরিবর্তন আসায় এবারের সম্মেলনেও নেতাদের মনোভাব উচ্ছ্বসিত। মোদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু ছবি পোস্ট করেছেন, যেখানে তিনি ভক্তি ভরে পুতিন ও শি চিনপিংয়ের সাথে আড্ডা দিচ্ছেন। ছবিগুলিতে মোদিকে হাসিমুখে পুতিনের সাথে করমর্দন ও কোলাকুলি করতে দেখা গেছে। তিনি লিখেছেন, পুতিনের সাথে দেখা করার অনুভূতি সব সময়ই আনন্দের।

অন্তর্জাতিক এই পরিস্থিতিতে মোদি-পুতিন এবং শির মধ্যকার সম্পর্কের গভীরতা নিয়ে চলমান জল্পনা উঠেছে। বিশেষ করে, ভারতের উপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কারণে ভারতের ও মার্কিন বাণিজ্য ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনার জন্য এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে বলে দাবি ওয়াশিংটনের। তবে এখনো কোনওভাবে চীন উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘটনা ঘটে নি।

এমন পরিস্থিতিতে তিন রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা কী নতুন কোনো জটিল অক্ষ তৈরি করবে, এই প্রশ্ন উঠছে। শি চিনপিং ইতোমধ্যে মোদির সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করেছেন। চীন সরকারের গণমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, শি মোদিও বলেছেন, চীন ও ভারত পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং তারা সহযোগিতার অংশীদার। শি আরও বলেন, দুদেশ একে অন্যের কাছে হুমকি নয়, বরং উন্নয়নের সুযোগ। এভাবেই এই বৈঠক ও সম্পর্কের ভবিষ্যত দিকনির্দেশনা স্পষ্ট হচ্ছে।