মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, মৎস্য খাতে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের অবদান সত্যিই গর্বের মতো। তিনি বলেন, দেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় গবেষণা ও প্রযুক্তির বিকল্প নেই, এবং এর জন্য সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণা খাতে আরও বেশি বরাদ্দ দিতে হবে।
শুক্রবার সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের আয়োজনায় তিন দিনব্যাপী তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন ফর সাসটেইনেবল ফিশারিজের (আইসিএসএফ) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হলো টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা এবং গবেষণার উন্নয়ন, উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ভাগাভাগি ও অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি।
উপদেষ্টা আরও বলেন, অতিরিক্ত মাছ শিকার ও অবৈধ জাল ব্যবহারে মাছের ক্ষতি হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। চায়না জাল, ট্রল ডোর ইত্যাদি ব্যবহার করে মাছ শিকার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিকর, যার কারণেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মাছের এই অসামান্য সম্পদ হুমকির মুখে পড়ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, শীতকালে কৃষিকাজে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বর্ষাকালীন সময়ের নদী ও জলাশয়ে সেই ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রভাব পড়ে, যা মাছের স্বাস্থ্য নষ্ট করছে। কৃষিতে কীটনাশকের ব্যবহার কমানোর লক্ষ্যে ইতিমধ্যে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে, যাতে করে উৎপাদন বাড়ানো ও মৎস্য সম্পদ রক্ষা একযোগে সম্ভব হয়।
বিশেষ করে ইলিশের উৎপাদন ও আহরণ কমে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের বাজারে এর প্রভাব বেশ বোঝা যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, সময়মত বৃষ্টিপাতের অভাব, জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ এবং নদীর নাব্যতা হ্রাসের কারণে ইলিশের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের মিঠা পানির মাছচাষ আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানসম্পন্ন ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে এ ধরনের মাছের চাষ আরও বৃদ্ধি করতে হবে। সেই সঙ্গে হাওড়, নদী ও প্রজনন ক্ষেত্রগুলো সংরক্ষণ ও এই এলাকার পরিবেশ বিকাশে বিশেষ জোর দিতে হবে।
হাওড়ের উন্নয়নের বিষয়েও তিনি বলেন, অপ্রয়োজনীয় ও পরিকল্পনাহীন রাস্তা বা স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে প্রকৃতি বা পরিবেশের ক্ষতি না করে আরও বাস্তবসম্মত এবং বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। এর জন্য হাওড় গবেষণা ইনস্টিটিউট ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মধ্যে সমন্বয় করে এ অঞ্চলের পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হবে।
সম্মেলনের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলাম। মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নির্মল চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্র, পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এটিএম মাহবুব-ই-এলাহি ও কোয়ালিটি ফিডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম. কায়সার রহমান।
সম্মেলনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল ওয়াহাব। এই তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ১১টি সেশনে প্রায় আড়াই শতাধিক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে।