কফি শুধু একটি পানীয় নয়, বরং অনেকের জন্য এটি আবেগ, সম্পর্ক ও ভালোবাসার প্রতীক। প্রতি বছর ১ অক্টোবর বিশ্বজুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক কফি দিবস, যেখানে বর্তমান বিশ্বের কফি চাষি, উৎপাদক এবং এর ইতিহাস ও গুরুত্বকে সম্মাননা জানানো হয়। এই দিবসের মাধ্যমে আমরা স্মরণ করি কফি শিল্পের অবদান এবং এর উন্নয়ন।
সকালবেলার সাধারণ অভ্যাস হিসেবে অনেকেরই এক কাপ কফি পান করার রীতি রয়েছে। চা বা কফি উভয়ই স্নায়ু উদ্দীপিত করে, মনোযোগ বাড়ায় আর মন ভালো করে। তবে এখন যদি বলা হয়, সেই কফির জন্য আপনাকে যদি দিতে হয় ৮৩ হাজার টাকা! তাহলে অনেকের জন্যই ভাবনা বাড়বে, কারণ এটা শুনলে মনে হবে কিঞ্চিৎ অস্বাভাবিক। এর কারণ হল, দুবাইয়ের এক বিলাসবহুল কফিশপের বিশাল জবাবদিহি এই অঙ্কের মধ্যে থাকা বিশ্বের সবচেয়ে দামী এক কাপ কফি পরিবেশন করে।
এই কফি যার দাম ২ হাজার ৫০০ দিরহাম বা প্রায় ৮২,৭৮৭ টাকা, এবং এই কফিতে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্লভ গেইশা জাতের কফি বিন ব্যবহার করা হয়। এই কফি পরিবেশন করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড, যা এখন বিশ্বে সবথেকে বেশি দামের কফি হিসেবে স্বীকৃত। তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি এই রেকর্ডটি নির্ধারিত হয় দুবাইয়ের একটি জনপ্রিয় কফিশপ ‘রোস্টার্স’-এর আউটলেটে। প্রতিষ্ঠানটির ১৫টি শাখা রয়েছে, যার মধ্যে চারটি আছে দুবাইয়ে। ১৩ সেপ্টেম্বর এই রেকর্ড অর্জিত হয় মুলত, যেখানে একটি বিশেষভাবে প্রস্তুত করা কাপের মাধ্যমে অতিথিদের মিষ্টি স্বাদ উপহার দেওয়া হয়।
কফিটি তৈরি করা হয় ভি৬০ পোর-ওভার পদ্ধতিতে, যা অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে প্রস্তুত। একে পরিবেশন করা হয় জাপানের ঐতিহ্যবাহী এডো কিরিকো ক্রিস্টাল গ্লাসে, যা হাতে তৈরি এবং দৃষ্টি আকর্ষণীয় কারুকার্যে খোদাই করা। সঙ্গে দেওয়া হয় তিরামিসু ও কফি বিন মিশ্রিত চকলেট আইসক্রিমের এক স্কুপ। বিশেষ গুরুত্ব ছিল পরিবেশনের পদ্ধতিতে, যেখানে কফির মূল উপাদানটি ছিল পানামার গেইশা জাতের বিরল কফি বিন। এই বিনগুলো বিশ্ববাজারে সবচেয়ে দামী মেনে নেওয়া হয়, কারণ এর ফুলেল এবং ফলের ঘ্রাণ, সাইট্রাসের গন্ধের জন্য তারা বিশেষভাবে পরিচিত।
আগস্টে অনুষ্ঠিত ‘বেস্ট অব পানামা ২০২৫’ নিলামে রোস্টার্স এই ২০ কিলোগ্রাম গেইশা কাপটি কিনে নেয় ৬ লাখ ৪ হাজার মার্কিন ডলারে, যা কফি শিল্পে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
এই অভিজাত আয়োজনের সব ধাপ ছিল সূক্ষ্ম ও শিল্পসম্মত। কফির প্রস্তুতি যন্ত্রের সঙ্গে ছিল নির্দিষ্ট তাপমাত্রা-নিয়ন্ত্রিত কেটলি ও কাচের ড্রিপার। প্রতিটি ধাপের বিশদ তথ্য অতিথিকে জানানো হয় বিস্তারিত কার্ডে, যেখানে কফির উৎস, প্রক্রিয়া আর সুগন্ধের বর্ণনা ছিল।
এখনও পর্যন্ত এ ভ্যাক্টরামেবল ঘটনাটির অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির নাম প্রকাশ করা হয়নি, তবে রোস্টার্স কর্তৃপক্ষ এই ইভেন্টকে তাদের ব্র্যান্ডের প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ব্যবহার করেছেন।
প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কনস্টান্টিন হারবুজ বলেন, এই রেকর্ড আমাদের দলের কঠোর পরিশ্রম, কারিগরী দক্ষতা এবং উদ্ভাবনের স্বীকৃতি। এটি প্রমাণ করে, দুবাই এখন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ কফি অভিজ্ঞতার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিলাসবহুল কফির সংস্কৃতিতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে দুবাই, যেখানে কফি এখন শুধুই পানীয় নয়, বরং রুচি, সংস্কৃতি ও অভিজাততার প্রতীক। এই রেকর্ডের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে কফিপ্রেমীদের মধ্যে আরও বেশি আলোচনা ও আগ্রহ তৈরি হচ্ছে।