০১:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে লিভ টু আপিলের শুনানি আজ সরকার শিক্ষকদের বিপক্ষে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকারের পক্ষ থেকে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সহনীয় করার জন্য প্রার্থনা আহ্বান ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ফের ভূমিকম্প, আতঙ্কে নগরবাসী খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় চীনা বিশেষজ্ঞদের এভারকেয়ারে আগমন খালেদা জিয়াকে ভিভিআইপি ঘোষণা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে কারো জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গভীর সমুদ্রে অকুতোভয় কাণ্ডারী হয়ে উঠছে ক্যাডেটরা: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা গুমের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নতুন আইন খালেদা জিয়াকে আনুষ্ঠানিক নিরাপত্তা দিল এসএসএফ

বিশ্বব্যাপী অস্ত্র ব্যবসা ইতিহাসের সর্বোচ্চ মুনাফা ৬৭৯ বিলিয়ন ডলার

বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, আঞ্চলিক সংঘর্ষ এবং সামরিক ব্যয়ের ধারাবাহিক বাড়তির কারণে অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিগুলোর লাভের অঙ্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ২০২৪ সালে, শীর্ষ ১০০ অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মোট ৬৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেকর্ড পরিমাণ আয় করেছে, যা পূর্ববর্তী বছরে তুলনায় অসাধারণ এক রেকর্ড। এই তথ্য প্রকাশ করেছে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে।

বিশ্বব্যাপী সংঘাত এবং সামরিক প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় অস্ত্রের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে গাজা ও ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধের প্রভাবও এই বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত বছর তুলনায় সামরিক অস্ত্র বিক্রি ৫.৯ শতাংশ বেড়েছে।

অস্ত্র ব্যবসার এই বৃদ্ধি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপভিত্তিক কোম্পানি থেকে এসেছে। অন্যদিকে, এশিয়া-ওশেনিয়া অঞ্চলের বিক্রি কিছুটা কমেছে, যার পেছনে চীনের অস্ত্র বিক্রির সংকটকে দায়ী করা হচ্ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ৩৯টি অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান থেকে ৩০টি গত বছর বিক্রিতে বৃদ্ধি দেখিয়েছে। এরা মোট ৩৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের অস্ত্র বিক্রি করেছে, যা আগের তুলনায় ৩.৮ শতাংশ বেশি। এই তালিকায় প্রথমবারের মতো স্থান করে নিয়েছে বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্কের স্পেসএক্স, যার সামরিক বিক্রির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে ১.৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

ইউরোপের মধ্যে, রাশিয়া ব্যাতীত ২৬টি কোম্পানি এই তালিকায় অবস্থান করছে, যাদের মোট বিক্রি ১৫১ বিলিয়ন ডলার। ইউরোপের বিভিন্ন কোম্পানি ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে চেক প্রজাতন্ত্রের ইউক্রেনের জন্য আর্মামেন্ট বিক্রি ১৯৩ শতাংশ বাড়ে।

রাশিয়ার দুটি প্রধান অস্ত্র সংস্থা রোস্তেক ও ইউনাইটেড শিপবিল্ডিং করপোরেশনের মোট আয় হয়েছে ৩১.২ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি।

বিশেষ করে, গাজায় চলমান সংঘর্ষের মধ্যেই ইসরায়েলের অস্ত্র রপ্তানি রেকর্ড ভেঙেছে। ২০২৪ সালে ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর বিক্রির পরিমাণ ৩১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও কন্ট্রা–ড্রোনের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

অন্যদিকে, এশিয়া–ওশেনিয়ার অঞ্চলে মোট অস্ত্র বিক্রি ১.২ শতাংশ কমে ১৩০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো, চীনারা চুক্তি ও চাহিদা সংকটে ভুগছে, যার ফলশ্রুতিতে তাদের বিক্রি ৩১ শতাংশ কমেছে। বিশেষ করে নোরিনকো কোম্পানির বিক্রি ৩১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে সামরিক উত্তেজনা বাড়ায় অস্ত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। জাপানের পাঁচটি কোম্পানি ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৩.৩ বিলিয়ন ডলার, দক্ষিণ কোরিয়ার চার কোম্পানি ৩১ শতাংশ বেড়ে ১৪.১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার হানওয়াহ গ্রুপ একাই ৪২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে।

তুরস্কের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির মোট আয় হয়েছে ১০.১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি। অন্যান্য দেশের যেমন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ভারত, তাইওয়ান, নরওয়ে, কানাডা, স্পেন, পোল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার কোম্পানিগুলোরাও এই শীর্ষ ১০০-এর মধ্যে ঠাঁই নিয়েছে।

ট্যাগ :
সর্বাধিক পঠিত

বিশ্বব্যাপী অস্ত্র ব্যবসা ইতিহাসের সর্বোচ্চ মুনাফা ৬৭৯ বিলিয়ন ডলার

প্রকাশিতঃ ১১:৫৮:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৫

বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, আঞ্চলিক সংঘর্ষ এবং সামরিক ব্যয়ের ধারাবাহিক বাড়তির কারণে অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিগুলোর লাভের অঙ্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ২০২৪ সালে, শীর্ষ ১০০ অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মোট ৬৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেকর্ড পরিমাণ আয় করেছে, যা পূর্ববর্তী বছরে তুলনায় অসাধারণ এক রেকর্ড। এই তথ্য প্রকাশ করেছে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে।

বিশ্বব্যাপী সংঘাত এবং সামরিক প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় অস্ত্রের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে গাজা ও ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধের প্রভাবও এই বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত বছর তুলনায় সামরিক অস্ত্র বিক্রি ৫.৯ শতাংশ বেড়েছে।

অস্ত্র ব্যবসার এই বৃদ্ধি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপভিত্তিক কোম্পানি থেকে এসেছে। অন্যদিকে, এশিয়া-ওশেনিয়া অঞ্চলের বিক্রি কিছুটা কমেছে, যার পেছনে চীনের অস্ত্র বিক্রির সংকটকে দায়ী করা হচ্ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ৩৯টি অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান থেকে ৩০টি গত বছর বিক্রিতে বৃদ্ধি দেখিয়েছে। এরা মোট ৩৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের অস্ত্র বিক্রি করেছে, যা আগের তুলনায় ৩.৮ শতাংশ বেশি। এই তালিকায় প্রথমবারের মতো স্থান করে নিয়েছে বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্কের স্পেসএক্স, যার সামরিক বিক্রির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে ১.৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

ইউরোপের মধ্যে, রাশিয়া ব্যাতীত ২৬টি কোম্পানি এই তালিকায় অবস্থান করছে, যাদের মোট বিক্রি ১৫১ বিলিয়ন ডলার। ইউরোপের বিভিন্ন কোম্পানি ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে চেক প্রজাতন্ত্রের ইউক্রেনের জন্য আর্মামেন্ট বিক্রি ১৯৩ শতাংশ বাড়ে।

রাশিয়ার দুটি প্রধান অস্ত্র সংস্থা রোস্তেক ও ইউনাইটেড শিপবিল্ডিং করপোরেশনের মোট আয় হয়েছে ৩১.২ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি।

বিশেষ করে, গাজায় চলমান সংঘর্ষের মধ্যেই ইসরায়েলের অস্ত্র রপ্তানি রেকর্ড ভেঙেছে। ২০২৪ সালে ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর বিক্রির পরিমাণ ৩১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও কন্ট্রা–ড্রোনের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

অন্যদিকে, এশিয়া–ওশেনিয়ার অঞ্চলে মোট অস্ত্র বিক্রি ১.২ শতাংশ কমে ১৩০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো, চীনারা চুক্তি ও চাহিদা সংকটে ভুগছে, যার ফলশ্রুতিতে তাদের বিক্রি ৩১ শতাংশ কমেছে। বিশেষ করে নোরিনকো কোম্পানির বিক্রি ৩১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে সামরিক উত্তেজনা বাড়ায় অস্ত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। জাপানের পাঁচটি কোম্পানি ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৩.৩ বিলিয়ন ডলার, দক্ষিণ কোরিয়ার চার কোম্পানি ৩১ শতাংশ বেড়ে ১৪.১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার হানওয়াহ গ্রুপ একাই ৪২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে।

তুরস্কের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির মোট আয় হয়েছে ১০.১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি। অন্যান্য দেশের যেমন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ভারত, তাইওয়ান, নরওয়ে, কানাডা, স্পেন, পোল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার কোম্পানিগুলোরাও এই শীর্ষ ১০০-এর মধ্যে ঠাঁই নিয়েছে।