১১ বছর আগে মালয়েশিয়ার এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটি রহস্যময়ভাবে উধাও হয়ে যায়। কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিংগামী এফএম৩৭০ উড়োজাহাজটি ২৩৯ জন যাত্রী ও ক্রসহীন হয়ে যায়, যা বিশ্বের উড্ডয়ন ইতিহাসের অন্যতম জটিল এবং রহস্যময় ঘটনাগুলোর একটিতে পরিণত হয়। ২০১৪ সালের ৮ মার্চ এই উড়োজাহাজটি রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় এবং তার পর থেকে চালানো হয়েছে ব্যাপক অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান। তবে, ফলাফল শূণ্যই রইল। দীর্ঘ সময় পর আবারও মালয়েশিয়া সরকারের উদ্যোগে এই রহস্যময় উড়োজাহাজটির খোঁজে নতুন করে অভিযান শুরু হয়েছে। এ খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র প্রতিবেদন দিয়ে জানা গেছে।
উড়োজাহাজটির অধিকাংশ যাত্রী ছিলেন চীনের নাগরিক, বাকিদের মধ্যে মালয়েশিয়ান, ইন্দোনেশিয়ান, অস্ট্রেলিয়ান, ভারতীয়, মার্কিনী, নেদারল্যান্ডস ও ফরাসি নাগরিকরা ছিলেন। এটি যেন এক গোপন রহস্য যা এখনও উন্মোচিত হয়নি।
নতুন অভিযান সম্পর্কেঃ কুয়ালালামপুর জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে গভীর সমুদ্রে আবারও এ ঘটনা তদন্তে অভিযান চালানো হবে। এই অভিযান পরিচালনা করবে ওশান ইনফিনিটি নামের একটি প্রতিষ্ঠান, যার দায়িত্বে থাকবে উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া। বিশেষ করে যেখানে উড়োজাহাজটির থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, সেই অংশে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে অভিযান চালানো হবে।
এর আগেও ২০১৮ সালে দক্ষিণ ভারতের মহাসাগরে অন্ধকার গভীরতা জোড়া অভিযান চালানো হয়েছিল, কিন্তু ফল মেলেনি। এবার আবারও একই সংস্থার তত্ত্বাবধানে অভিযান শুরু হচ্ছে। তবে, নির্দিষ্ট শর্তে—উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ না পেলে কোনো অর্থ প্রদান করা হবে না। এই শর্তে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে আরও একবার এই সংস্থা ব্যর্থ হয়। এছাড়া, অস্ট্রেলিয়া নেতৃত্বাধীন ভারত মহাসাগরে বিশাল এলাকাজুড়ে তিন বছর ধরে উদ্ধার কর্মসূচি চললেও, তাতে ফল বিপরীত হয়। এসব প্রক্রিয়া চলাকালীন, যেসব পরিবার হারানো প্রিয়জনদের জন্য অপেক্ষা করছেন, তারা এখনো আশাবাদে বুক বাঁধছেন। তারা মনে করছেন, নতুন অভিযান থেকে হয়তো কিছু উত্তর মিলবে।
উড়োজাহাজের হারানো রহস্যের পেছনে নানা তত্ত্ব থাকলেও সত্যতা আজো অজানা। কেউ বলছে, অভিজ্ঞ পাইলট জাহারি আহমেদ শাহ হয়তো বিপথগামী হয়েছিলেন বা অন্য কারো প্ররোচনায় এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৮ সালের তদন্ত প্রতিবেদনে বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জয় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের ব্যর্থতা এ ঘটনায় দায়ী। সেখানে আরও বলা হয়, পাইলট নিজের ইচ্ছায় উড়োজাহাজের পথ পরিবর্তন করেছিলেন। গোটা বিস্তারিত 495 পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে তদন্তকারীরা স্বীকার করেছেন, এখনও জানেন না কি কারণে উড়োজাহাজটি উধাও হলো। পাইলটের ছাড়াও অন্য কারো দায়িত্ব আছে কি না, সেটাও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।
১১ বছর পরে, বেইজিংয়ের সরকারি দপ্তর ও মালয়েশিয়ার দূতাবাসের বাইরে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়ে প্রিয়জনদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করে। হাতে ছিল ব্যানার, লেখা—‘আমাদের প্রিয়জনদের ফিরে চাই’ ও ‘১১ বছর অপেক্ষার অবসান কবে হবে?’। এটি যেন এক অপেক্ষার শেষের প্রত্যাশা ও সত্য পাওয়ার আশা।
শ্রীমঙ্গল২৪ ডেস্ক 




















