০৫:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষঃ
এনসিপি থেকে বহিষ্কারের পর মাহিনের বিশ্লেষণমূলক মন্তব্য নরওয়ে গবেষণা জাহাজ বঙ্গোপসাগরে মৎস্য ও ইকোসিস্টেম জরিপ শুরু করেছে বয়স হলে ভুল বোঝার ব্যাপারটা বুঝতে পারবে, তখন লজ্জিত হবে নিজেকে নিয়ন্ত্রকদের সম্পদ তদন্ত চাই দুদকের ইইউ ৪ মিলিয়ন ইউরো আর্থিক সহযোগিতা দেবে বাংলাদেশের নির্বাচন উন্নত করতে ইভেন্ট বুকিংয়ে এক বছরের জন্য ৫০% ছাড় দিচ্ছে আইসিসিএল ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগ সভাপতি পরীক্ষায় ফেল, টানা ২৬ বছর গৃহবন্দী নারীকে উদ্ধার খাদ্য মন্ত্রনালয়ের রেকর্ড পরিমাণ ধান ও চাল সংগ্রহ গাইবান্ধায় ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ ‘মওলানা ভাসানী সেতু’ উদ্বোধন করবেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা

নওগাঁ জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধন, নেতৃত্বের কঠিন আগাম নির্বাচনী দৌড় শুরু

নওগাঁ জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার, ১১ আগস্ট দুপুর ১টায় শহরের নওগাঁ কনভেনশন সেন্টারে এই উজ্জীবনীমূলক অনুষ্ঠানের সূচনা করেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম। তাঁকে বরণ করে নেওয়া হয় জাতীয় সংগীত ও দলীয় গানে সংগীতজ্ঞদের পরিবেশনের মাধ্যমে, যেখানে স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ ও জুলি আন্দোলনে শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সম্মেলনের এই মুহূর্তে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যিনি দল পরিচালনার নতুন দিকনির্দেশনা দেবেন এবং নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখতে পারেন। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। এছাড়াও, রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম ও এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন দলের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

অপরদিকে, বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ, যা সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে। এর মাধ্যমে জেলার ১৪টি ইউনিটের মোট ১ হাজার ৪১৪ ভোটার গোপন ব্যালটে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং দুটি সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন। এই নির্বাচনে কারা জিতবেন, কাদের নেতৃত্বে চলবে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং নতুন নেতৃত্বের কারা আসবেন—এসব নিয়ে এখন তুমুল গুঞ্জন ও বিশ্লেষণ চলছে তৃণমূল ও শহরের রাজনৈতিক মহলে।

দীর্ঘ ১৫ বছর পরে এই সম্মেলন হতে যাচ্ছে, যা বর্তমানে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি করেছে। এর আগে নানা সীমাবদ্ধতা ও বাধার কারণে এই ধরনের বড় কাউন্সিল বা সম্মেলন সম্পন্ন হয়নি। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তনে এবার দলটি যেন নতুন করে প্রাণ পেয়েছে এবং শহরগুলোয় দেখা গেছে নেতাদের ছবি, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডের ঝলক। এই সম্মেলন নেতাকর্মীদের একান্ত প্রয়োজনে বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার মাঝে তাদের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে, তারা নতুন নেতৃত্বের অপেক্ষায়।

নেতাকর্মীরা এখন দলের নতুন নেতৃত্বে কারা আসছেন সে বিষয়টি নিয়ে তীব্র আলোচনায় ডুবে গেছে। অনেকের মনে হচ্ছে, যারা রাজপথে সক্রিয় ছিলেন, দলের জন্য কাজ করেছেন, তাদের মধ্য থেকে একজন নেতৃত্বে আসবেন, আর ধাকি আর কৌশলের ভিত্তিতে কেউ কেউ জয় পাবেন বলে ধারণা। তবে সাধারণ নেতাকর্মীরা একবাক্যে বলছেন, যারা দলের মূল দুর্দিনে দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদেরকেই যেন প্রাধান্য দেওয়া হয়।

বিস্তারিত জানা গেছে, ২০১০ সালে শেষবারের মতো এই জেলা দলের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সময় কাউন্সিলরদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন সামসুজ্জোহা খান, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু ও সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন। এরপর ২০১৫ সালে ওই কমিটি বিলুপ্ত হয়ে গেলে নতুন কোনও কমিটি গঠন হয়নি।

পরবর্তীকালে ২০২২ সালে আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু ও বায়েজিদ হোসেন পলাশের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল একটি আহ্বায়ক কমিটি। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সম্মেলনের পূর্ববর্তী সময়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন ও প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। গত আগস্টের ৩ তারিখ মনোনয়নপত্রের Tঅসানি হয়, যেখানে প্রধান প্রার্থী হিসেবে দুটি পদে বেশ কিছু বিশিষ্ট নেতার নাম ওঠে।

নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেনা সাবেক সভাপতি নজমুল হক সনি, ধলু, এবং অন্যান্য নবীন ও প্রবীণ নেতা। সাধারণ সম্পাদক পদে লড়াই চালাচ্ছেন সাবেক সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ, মামুনুর রহমান রিপন, শহিদুল ইসলাম ও আমিনুল হক বেলাল। সাংগঠনিক সম্পাদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন আটজন প্রার্থী, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শফিউল আজম রানাসহ আরও অনেকে।

এদিকে, সম্মেলনের একদিন আগেই, অর্থাৎ গত রোববার দলের কিছু প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিলের এবং নির্বাচনী তফসিলের বিরোধিতা করে বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম বেলাল এক সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি দাবি করেন, সম্মেলনে ভোটার তালিকা ‘বিতর্কিত’ এবং এই বিষয়ে তিনি প্রার্থিতা থেকে বিরত থাকছেন। এইসব ঘটনাপ্রবাহ, বিশ্লেষণ ও আলোচনা চলমান থাকলেও আগামী দিনগুলো হবে নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

ট্যাগ :
সর্বাধিক পঠিত

আজ উদ্বোধন হচ্ছে মাওলানা ভাসানী সেতু

নওগাঁ জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধন, নেতৃত্বের কঠিন আগাম নির্বাচনী দৌড় শুরু

প্রকাশিতঃ ১০:৪৮:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

নওগাঁ জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার, ১১ আগস্ট দুপুর ১টায় শহরের নওগাঁ কনভেনশন সেন্টারে এই উজ্জীবনীমূলক অনুষ্ঠানের সূচনা করেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম। তাঁকে বরণ করে নেওয়া হয় জাতীয় সংগীত ও দলীয় গানে সংগীতজ্ঞদের পরিবেশনের মাধ্যমে, যেখানে স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ ও জুলি আন্দোলনে শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সম্মেলনের এই মুহূর্তে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যিনি দল পরিচালনার নতুন দিকনির্দেশনা দেবেন এবং নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখতে পারেন। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। এছাড়াও, রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম ও এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন দলের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

অপরদিকে, বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ, যা সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে। এর মাধ্যমে জেলার ১৪টি ইউনিটের মোট ১ হাজার ৪১৪ ভোটার গোপন ব্যালটে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং দুটি সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন। এই নির্বাচনে কারা জিতবেন, কাদের নেতৃত্বে চলবে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং নতুন নেতৃত্বের কারা আসবেন—এসব নিয়ে এখন তুমুল গুঞ্জন ও বিশ্লেষণ চলছে তৃণমূল ও শহরের রাজনৈতিক মহলে।

দীর্ঘ ১৫ বছর পরে এই সম্মেলন হতে যাচ্ছে, যা বর্তমানে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি করেছে। এর আগে নানা সীমাবদ্ধতা ও বাধার কারণে এই ধরনের বড় কাউন্সিল বা সম্মেলন সম্পন্ন হয়নি। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তনে এবার দলটি যেন নতুন করে প্রাণ পেয়েছে এবং শহরগুলোয় দেখা গেছে নেতাদের ছবি, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডের ঝলক। এই সম্মেলন নেতাকর্মীদের একান্ত প্রয়োজনে বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার মাঝে তাদের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে, তারা নতুন নেতৃত্বের অপেক্ষায়।

নেতাকর্মীরা এখন দলের নতুন নেতৃত্বে কারা আসছেন সে বিষয়টি নিয়ে তীব্র আলোচনায় ডুবে গেছে। অনেকের মনে হচ্ছে, যারা রাজপথে সক্রিয় ছিলেন, দলের জন্য কাজ করেছেন, তাদের মধ্য থেকে একজন নেতৃত্বে আসবেন, আর ধাকি আর কৌশলের ভিত্তিতে কেউ কেউ জয় পাবেন বলে ধারণা। তবে সাধারণ নেতাকর্মীরা একবাক্যে বলছেন, যারা দলের মূল দুর্দিনে দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদেরকেই যেন প্রাধান্য দেওয়া হয়।

বিস্তারিত জানা গেছে, ২০১০ সালে শেষবারের মতো এই জেলা দলের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সময় কাউন্সিলরদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন সামসুজ্জোহা খান, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু ও সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন। এরপর ২০১৫ সালে ওই কমিটি বিলুপ্ত হয়ে গেলে নতুন কোনও কমিটি গঠন হয়নি।

পরবর্তীকালে ২০২২ সালে আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু ও বায়েজিদ হোসেন পলাশের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল একটি আহ্বায়ক কমিটি। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সম্মেলনের পূর্ববর্তী সময়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন ও প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। গত আগস্টের ৩ তারিখ মনোনয়নপত্রের Tঅসানি হয়, যেখানে প্রধান প্রার্থী হিসেবে দুটি পদে বেশ কিছু বিশিষ্ট নেতার নাম ওঠে।

নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেনা সাবেক সভাপতি নজমুল হক সনি, ধলু, এবং অন্যান্য নবীন ও প্রবীণ নেতা। সাধারণ সম্পাদক পদে লড়াই চালাচ্ছেন সাবেক সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ, মামুনুর রহমান রিপন, শহিদুল ইসলাম ও আমিনুল হক বেলাল। সাংগঠনিক সম্পাদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন আটজন প্রার্থী, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শফিউল আজম রানাসহ আরও অনেকে।

এদিকে, সম্মেলনের একদিন আগেই, অর্থাৎ গত রোববার দলের কিছু প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিলের এবং নির্বাচনী তফসিলের বিরোধিতা করে বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম বেলাল এক সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি দাবি করেন, সম্মেলনে ভোটার তালিকা ‘বিতর্কিত’ এবং এই বিষয়ে তিনি প্রার্থিতা থেকে বিরত থাকছেন। এইসব ঘটনাপ্রবাহ, বিশ্লেষণ ও আলোচনা চলমান থাকলেও আগামী দিনগুলো হবে নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।